কিভাবে বাধা অতিক্রম করবেন

( একাত্তরে সব বাধা অতিক্রম করে যুদ্ধে জিতেছিলাম , আসুন জীবন যুদ্ধে জয়ী হই )

এই গল্প শুরু করছি এক গুরু ও শিষ্যকে নিয়ে। শিষ্য সারাক্ষণই অসন্তুষ্ট। গুরু যা বলে সব করে, তবে মুখটি সব সময়ই ভার।

গুরু শিষ্যকে বললেন, ‘এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো।’ গুরু গ্লাসে এক চামচ নুন গুলে দিলেন। বললেন, ‘চুমুক দাও।’ শিষ্য পানি খেল। বলল, ‘কী জঘন্য, নোনতা আর নোনতা।’

এবার গুরু শিষ্যকে নিয়ে গেলেন একটি পুকুরে। একেবারে স্বচ্ছ পানি। এখানেও গুরু এক চামচ লবণ ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পানিটা খাও।’ শিষ্য খেল।

গুরু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন লাগছে?’ খুব ভালো, একেবারে ফ্রেশ, নোনতা লাগছে না। এবার গুরু শিষ্যকে পাশে বসালেন।

বললেন, ‘জীবনে যত যন্ত্রণা, সেটা হলো এক চামচ লবণের মতো, বেশিও নয়, কমও নয়। তিক্ততা নির্ভর করবে শুধু তোমার ওপর, কোথায় তুমি লবণ ছিটিয়ে দেবে।

যে মুহূর্তে যন্ত্রণা শুরু হবে, কাচের গ্লাস না হয়ে পুকুর হও। দেখবে জীবনকে আর তেতো লাগছে না।’

পাঠক, আপনার জীবনে এমন জিনিস কি কখনো ঘটেছে? আপনি অনেক উদ্যোগ নিয়ে নতুন একটি প্রজেক্ট শুরু করেছেন। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত। এমন একটি বাধা এল যে আপনি মর্মাহত।

আপনার মনে হয়েছে, খোদা, কেন আমি, আমি কেন? সবচেয়ে যে বড় সমস্যা আপনার জীবনে, সেটা হলো সন্দেহ আর ভয়। আপনি যদি আত্মবিশ্বাসী না হোন, কখনোই সামনে এগোতে পারবেন না।

শুধু পৃথিবীর সবাইকে দোষ দেবেন আর ভাগ্যকে বলবেন, তোমার জন্যই আমার এ রকম হলো। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যার জীবনে বাধা-বিপত্তি আসেনি।

যখন একজন যুবক সক্রেটিসকে জিজ্ঞেস করল, ‘কিভাবে আমি আমার জীবনের বাধাগুলো মোকাবেলা করতে পারি?’ উত্তর এল, ‘আগামীকাল বিকেলে সমুদ্রের পারে এসো।’

যুবকটি অবাক হয়ে বলল, ‘সমুদ্রের পারে আসব কেন?’ হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি এসো।

পরের দিন যুবকটি যখন এল, সক্রেটিস তাকে নিয়ে সমুদ্রের পানিতে নামলেন। যুবককে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ সক্রেটিস তার (যুবকের) মাথাটি পানির নিচে ডুবিয়ে দিলেন এবং জোরে চেপে ধরলেন, যাতে যুবকটি নিঃশ্বাস নিতে না পারে।

যুবকটি যতই চেষ্টা করতে থাকল পানির ওপরে ওঠার জন্য, সক্রেটিসক আরো জোরে তাকে চেপে ধরলেন। যখন যুবকের শরীর নীল হতে শুরু করল, সেই মুহূর্তে সক্রেটিস তাকে ছেড়ে দিলেন। আধঘণ্টা যুবক নির্বাক হয়ে পড়ে রইল।

এবার সক্রেটিস বললেন, ‘তোমাকে যখন পানিতে ডুবিয়ে দিচ্ছিলাম, তুমি কি চেয়েছিলে জীবনে, বলো তো?’ যুবক বলল, ‘একটু হাওয়া।’

সক্রেটিস বললেন, ‘আর কিছু নয় টাকা-পয়সা, সম্মান?’ না, শুধু একটু হাওয়া।

এবার সক্রেটিস বললেন, ‘তোমার জীবনে যখনই কোনো বাধা-বিপত্তি আসবে, যেভাবে তুমি হাওয়া চেয়েছিলে, সেভাবে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

জীবনে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো একটি জ্বলন্ত ইচ্ছা, কী রকম মরিয়া হতে তুমি চাও।

তাই পাঠক, জীবনে বাধা-বিপত্তি আসবে, ঝোড়ো বাতাস আসবে, আপনি আপনার লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করুন।

বাধা-বিপত্তি জয় করার সবচেয়ে সুন্দর ফর্মুলা, রবি ঠাকুরের ভাষায় :

‘পশ্চিমে তুই তাকিয়ে দেখিস মেঘে আকাশ ডোবা

আনন্দে তুই পূর্বের দিকে দেখ না তারার শোভা।’

( আমার “বদলে যান এখনই ” বইটি থেকে )

 

Share This